ব্যারিস্টার মওদুদের শেষ বিদায়ে লাখো মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ৯:২৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২১

এম.এস আরমান,নোয়াখালী প্রতিনিধি: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানালেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

প্রয়াত এই রাজনীতিবিদের মরদেহ শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয় সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। পরে তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে এবং নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তার জানাজা অংশ নেয় হাজারো মানুষ।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত চরিত্র মওদুদ আহমদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি উপ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, পরে এইচ এম এরশাদের সময়ে উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।

সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তার। ৮১ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে পৌঁছানোর পর রাতে কিছু সময় তার কফিন গুলশান এভিনিউয়ে তার বাসায় রাখা হয়। রাতে মরদেহ রাখা হয় এভারকেয়ার হাসপাতালের হিমঘরে।

মওদুদের কফিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয় শুক্রবার সকাল ৯টায়। বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব চলে। স্বামীর কফিনের পাশে বসে ছিলেন শোকগ্রস্ত হাসনা মওদুদ। মওদুদের ভায়রা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরীও শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন শহীদ মিনারে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুক্রবার সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম, তৈমুর আলম খন্দকার, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শামীমুর রহমান শামীম, আবেদ রাজা, কাজী আবুল বাশার, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, নিপুণ রায় চৌধুরী, ছাত্র দলের ফজলুল রহমান খোকন, জাতীয় পার্টির(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির বেলায়েত হোসেন, গণফোরামের মোশতাক আহমেদ, জাগপার খোন্দকার লুতফর রহমান, আসাদুর রহমান আসাদ, ন্যাপের গোলাম মোস্তফাসহ বিভিন্ন সংগঠন জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত মওদুদ আহমদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানের পর কফিন নিয়ে যাওয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। সেখানে আইনজীবীরা মওদুদ আহমদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের কয়েকজন বিচারক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সা্বেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবদীন, বিএনপির শাহজাহান ওমর, ফজলুর রহমান, তৈমুর আলম খন্দকার, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কায়সার কামাল, নাসির উদ্দিন অসীম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ কয়েকশ আইনজীবী সেখানে মওদুদের জানাজায় অংশ নেন।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে মওদুদ আহমদের কফিন নিয়ে যাওয়া হয় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে; দীর্ঘদিন যে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেখানে প্রয়াত নেতার কফিন দলীয় পতাকায় ঢেকে দেন। পরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপির পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন এবং কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে নয়া পল্টনের সড়কে মওদুদের জানাজা হয়। শত শত নেতা-কর্মী সেখানে জানাজায় অংশ নেন।

পরে দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে তার নির্বাচনি এলাকা নোয়াখালীর কবিরহাট কলেজ মাঠে হাজার হাজার নেতাকর্মি ও ভক্তদের উপস্থিতিতে জানাজা শেষে নিজ এলাকা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সরকারি মুজিব কলেজ মাঠে জানাজায় উপস্থিত হতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের ঢল নেমে আসে। এসময় বিকেল ৫ টায় রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান শেষে বসুরহাট আশ্রাফুল উলূম মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মদ সুফি হুজুরের ইমামতিতে তার জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাযায় অংশ গ্রহণ করতে এসে মাঠে জায়গা নাপেয়ে শত শত মানুষ মাঠের বাহিরে এবং আশ পাশের ভবনের ছাদে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী ৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য তাবিথ আউয়ালসহ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাহাব উদ্দিন। বসুরহাট পৌরসভা মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।

সর্বশেষ সন্ধা ৬ টায় তার নিজ বাড়ি চরপার্বতী ইউনিয়েনের মানিকপুরে জানাজা শেষে মা-বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

মন্তব্য করুন