ইউসুফ পিয়াস:
ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হলে দেশের জনগণ কে সাথে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচী দেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীরসাহেব চরমোনাই।
মঙ্গলবার পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে দেশে চলমান অস্থিরতা ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি উপরিউক্ত কথাটি বলেন।
তিনি বলেন, যারা দেশের ওলামা সমাজকে এবং সম্মানিত ধর্মীয় ব্যক্তিদেরকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে, কটুক্তি করে, ব্যাঙ্গ কার্টুন প্রকাশ করে অপমান অপদস্ত করে, প্রাণ নাশের হুমকি দেয়, সংঘাত, মারামারি ও মল্লযুদ্ধের আহ্বান জানায় তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পীরসাহেব চরমোনাই লিখিত বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো,
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। বিসমিল্লাহীর রহমানির রাহিম। নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লিতালা রাসূলিহিল কারীম, আম্মা বাদ। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ! গোটা বিশ্ব যখন করোনা মহামারির ছোবলে বিপর্যস্ত, বাংলাদেশ যখন করোনা পরিস্থিতির প্রথম ধাপ অতিক্রম করে ২য় ধাপের হুমকি সামলাচ্ছে, দেশের সাধারণ মানুষ যখন রুটি-রুজি যোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে, দ্রব্যমূল্য যখন আকাশচুম্বি, যখন নাগরিক সমস্যা মোকাবেলায় দলমতের উর্ধে উঠে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী, তখন দেশের একটি চিহ্নিত মহল কর্তৃক জনগণের মাঝে ঘৃণা ও বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টার প্রেক্ষিতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আপনাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে আন্তরিকতার পরিচয় দেওয়ায় শুরুতেই সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রিয় সাংবাদিক বৃন্দ! আপনারা জানেন, ইসলাম চরিত্রগত ভাবেই শান্তিবাদী একটি ধর্ম। পবিত্র কুরআনে পরিষ্কার ভাবেই জোর করে কারো ওপরে ধর্ম চাপাতে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে ইসলাম তার সাড়ে চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসে কখনোই কোন জনপদে শক্তি প্রয়োগ করে ইসলামের কোন বিধান চাপিয়ে দেয় নাই। অনুরূপভাবে বাংলাদেশের সমাজকে অপরাধমুক্ত রাখতে, কর্মমুখি করতে, সমাজে শান্তি, শৃংখলা রক্ষা করতে, সমাজের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি, সহমর্মিতা ও সৌজন্যবোধ চর্চায় উলামায়ে কেরাম শান্তিপূর্ণভাবে যুগ-যুগ ধরে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ! আপনারা বর্তমান পরিস্থিতি জানেন। একটি সুবিধাভোগী মহল সাধারণ মুসলিম জনতার উত্থাপিত একটি মতামতকে কেন্দ্র করে গোটা দেশে লম্ফ-ঝম্ফ, হুমকি-ধমকি দিয়ে বিশৃংখলা তৈরীর চেষ্টা করছে। তাদের পেছনে বাংলাদেশের অর্জন, উন্নয়ন, সামাজিক সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা বিনাশে কর্মরত কিছু দেশী-বিদেশী চক্রেরও ইন্ধন রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঢাকা কেন্দ্রের প্রবেশ দ্বারে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে স্থাপিত হতে যাওয়া ভাস্কর্য নিয়ে একটি বিতর্ক তৈরী হয়েছে। ৫/৭টি মসজিদ মাদরাসার মিলন মোহনায়, দু’টি মসজিদের অবকাঠামো ভেঙ্গে এই পয়েন্টে ভাষ্কর্য স্থাপনের ফলে স্থানীয় ইমাম মুসল্লি ও তৌহিদী জনতা সেখানে ভাস্কর্যের বদলে বিকল্প কোন উত্তম পন্থায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণীয় করে রাখার দাবী জানিয়ে ছিলো। .
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ! আপনারা জানেন, বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যমান আইন কানুন মেনেই তৌহিদী জনতা সমাবেশ করেছে এবং সেখানে শালীন ভাষাতেই যৌক্তিক ভাবে ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়েছে। একই সাথে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানানোর বিকল্প পন্থাও প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি একেবারেই স্বাভাবিক একটি নাগরিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করলাম, একটি সুবিধাভোগী মহল বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দেশে চরম উস্কানী ও উত্তেজনা তৈরী করছে। সরকার যেখানে প্রতিবাদ সমাবেশের অনুমতি দিয়ে যৌক্তিক আলোচনা ও মতামতের পরিবেশ সংযমের সাথে বজায় রেখেছে সেখানে জনবিচ্ছিন্ন সুবিধাভোগী শ্রেণিটি উলামায়ে কেরামকে সন্ত্রাসী ভাষায় গালিগালাজ করছে, ঢালাওভাবে অপবাদ দিচ্ছে। মাহফিলের মতো চিরায়ত ধর্মীয় সংস্কৃতিকে উগ্রপন্থায় প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছে। রাজপথে সন্ত্রাসী কায়দায় উগ্র বক্তব্য ও শ্লোগান দিচ্ছে। প্রকাশ্যে আলেমসমাজকে মারধর, অপমান এমনকি তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে আমরা পরিষ্কার করে জানাচ্ছি যে, উলামায়ে কেরামের দাবীর মধ্যে মরহুম বঙ্গবন্ধুর প্রতি কোন বিদ্বেষ ছিলো না, অসম্মানও ছিলো না। বরং বিষয়টি ছিলো দেশের প্রায় ৯০%জনগণের বোধ বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক মুর্তি স্থাপন না করে অন্য কোন পন্থায় তাকে স্মরণ করার দাবী। যা অনেকটা মুসলিম রাষ্ট্রনায়ককে ইসলামের আলোকে দাফন কাফন না করে বিধর্মীয় পন্থায় তার শেষকৃত্য করার মতই নিন্দনীয় কাজ। আলেমসমাজ ও সাধারণ মুসলিম ধর্মপপ্রাণ জনগণ এ ক্ষেত্রে সরকারের কাছে নিজেদের প্রাণের আকুতি তুলে ধরতেই পারে। মানা না মানা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এই যৌক্তিক দাবীকে কেন্দ্র করেই তারা তাদের দীর্ঘ দিনের লালিত মূর্তি প্রীতি ও বিজাতীয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। বিষয়টিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় উলামায়ে কেরামকে অপদস্থ করার হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে। এসব কোন দেশপ্রেমিক মানুষের কাজ হতে পারে না।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ! বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৫০বছর হতে চলছে। ঐক্যবদ্ধ এই জাতি মাত্র ৯মাসে দেশটাকে স্বাধীন করেছে। এখানকার মানুষের ভাষা-সংস্কৃতি-ধর্মও প্রায় এক। এমন ঐক্যবদ্ধতা যে কোন জাতির জন্যই গর্ভের। কিন্তু আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ করছি, একটি মহল জনতার এই ঐক্যকে ছিন্নভিন্ন করতে চায়। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। দেশ পরিচালনায় প্রত্যেক নাগরিকের মতামত প্রকাশের ইখতেয়ার রয়েছে। সরকারের কোন কোন সিদ্ধান্তের গঠনমূলক সমালোচনা ও বিরোধিতা সভ্য সমাজের একটি বৈশিষ্ট্য। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের কোন কাজের সংশোধনমূলক পরামর্শ প্রদান গঠণমূলক সামালোচনা বা বিরোধিতা করলেই চিহ্নিত মহলটি পাকিস্তানপন্থী, রাজাকার, আলবদর, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ইত্যাদি বলে ভিন্নমত পোষণকারীদের প্রতি হামলে পড়ে। এতে করে জনগনের মধ্যে ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরী হয়। আমরা মনে করি বিষয়টি জাতীর উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে প্রধান অন্তরায়। প্রসঙ্গতঃ স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও তার পরিবার ৭১ সালে একনিষ্ঠভাবে মুক্তি সংগ্রামের সহযোগী ছিলেন। তার দরবার ছিলো এলাকার সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের আশ্রয়স্থল। বিষয়টি এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সর্বজন বিদিত। যারা এ বিষয়ে বিতর্ক তৈরি করছে, তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মুক্তি যুদ্ধের চেতনাকে তামাশায় পরিণত করছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ! উলামায়ে কেরাম কোরআন হাদিসের আলোকে তাদের মতামত জানান মাত্র। তারা কখনোই কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে বলেন না। একই ধারাবাহিকতায় ধোলাইপাড়ের মুর্তি নিয়ে তারা তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। এর সাথে দেশের অন্য মুর্তি ভাঙ্গার কোন সম্পর্ক নেই। বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনার সাথে উলামায়ে কেরামের মতামতকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সম্পৃক্ত করা উলামা ও ইসলাম বিদ্বেষের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ মাত্র।