দেশের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় পুরানা পল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছেন।
সারাদেশে আলেম-ওলামা, পীর মাশায়েখ ও দেশের শীর্ষ ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অশালীন ও কুরূচিপূর্ণ বক্তব্যে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভও করেছেন তিনি।
সোমবার বিকেলে পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মজলিসে আমেলার এক জরুরি সভায় তিনি বলেন, দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে একটি মহল গালি-গালাজ করে সরকার ও ইসলামপন্থিদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ইসলামবিরোধী এই চক্র দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি অবিলম্বে এ ধরনের উস্কানীমূলক বক্তব্য বন্ধের দাবি জানান।
যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, প্রেসিয়িাম সদস্য আলহাজ্ব খন্দকার গোলাম মাওলা, সহকারি মহাসচিব আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমাদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাকী, মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী প্রমুখ।
আরও পড়ুন-
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাতে চিঠি প্রস্তুত করছেন আলেমরা: বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড- বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও গুলশান আজাদ মসজিদের খতিব আল্লামা মাহমূদুল হাসানের নেতৃত্বে ভাস্কর্যের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যাসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব রেখেছে দেশের আলেমরা।
এবার সেগুলো চিঠি আকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া হবে। এই মুহূর্তে সেই চিঠি প্রস্তুত করছেন আলেমরা। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারেও আশাবাদী তারা।
এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার উদ্দেশে চিঠি তৈরির প্রস্তুতি চলছে। দু-একদিনের মধ্যেই ওনার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
অবশ্য আলেমদের প্রস্তাবের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।
গত শনিবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টা থেকে অনুষ্ঠিত এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দেশের চলমান সমস্যা নিয়ে আলেমদের বক্তব্য শোনা হয় এবং বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পাঁচটি প্রস্তাবনা
১. প্রস্তাবনা: মানব মূর্তি ও ভাস্কর্য যে কোনো উদ্দেশ্যে তৈরি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোন মহল বা কোন নেতাকে ভাস্কর্য বানিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শরীয়ত সম্মত নয়। এতে মুসলিম মৃত ব্যক্তির আত্মার কষ্ট হয়। কারো প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে মূর্তি ও ভাস্কর্য নির্মাণ না করে শতকরা ৯০ ভাগ জনগণের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কুরআন-সুন্নাহর সমর্থিত কোন উত্তম বিকল্প সন্ধান করাই যুক্তিযুক্ত।
২. প্রস্তাবনা: আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা, কার্টুন, বিষোদগার করা ইত্যাদির তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাশের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবমাননাকর আচরণের উপর কঠোর নজরদারি এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা হোক।
৩. প্রস্তাবনা: বিগত সময়ে ইমানী আন্দোলনে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দান ও মামলা প্রত্যাহার করা হোক। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সারাদেশে আলেম-ওলামা ও ইমাম-খতীবসহ সাধারণ মুসলমানদের উপর সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা হোক। ধোলাইপাড় চত্বরের পাশে ক্ষতিগ্রস্থ পুনঃনির্মিত মসজিদ নামাজের জন্য অবিলম্বে উম্মুক্ত করে দেওয়া হোক।
৪. প্রস্তাবনা: সম্প্রতি শব্দ দূষণ ও জনদুর্ভোগের অজুহাতে দীনি মাহফিলে লাউডস্পিকার ব্যবহারে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অপরদিকে সাধারণ শব্দদূষণ তথা উচ্চস্বরে গান-বাজনা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কেবল ওয়াজ মাহফিল নিয়ে শব্দ দূষণের অজুহাতে বিশেষ নির্দেশনা অনভিপ্রেত। অতএব জনগণের কল্যাণের পথে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে সকল দ্বীনী মাহফিল যথানিয়মে অনুষ্ঠানের অবাধ সুযোগ প্রদান করা হোক।
৫. প্রস্তাবনা : যে সকল বিষয় শরীয়তে নিষিদ্ধ বা হারাম সেসব বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর আলোকে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ একশ্রেণীর মানুষ আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও দায়িত্বহীন আচরণ করছে। কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের উস্কানি দিচ্ছে। এসবের খোঁজ-খবর রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। উস্কানিমূলক বক্তব্য অবমাননাকর মন্তব্য ও গান মিছিল-মিটিং সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে। ওলামায়ে কেরাম এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সরকারকে এসবের উপযুক্ত প্রতিবিধান করতে হবে অন্যথায় দেশব্যাপী উদ্বৃত্ত বিশৃংখলা অস্থিরতায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না। বিশেষ করে ইসলাম দিন ও বাংলাদেশবিরোধী দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
আই.এ/