ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সঙ্গে একজোট হয়ে ফিলিস্তিনিদের পিঠে খঞ্জর বসাচ্ছে সৌদি

প্রকাশিত: ৩:৫৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০২০

মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক রাষ্ট্র সৌদি আরবের শাসকরা ঐতিহাসিকভাবেই ছিল ইহুদিবাদী দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েল এবং তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি যে আচরণ করে- তার সমালোচক। এবার তারাই কি শেষ পর্যন্ত সেই দেশটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে।

আরব মিডিয়ায় অতীতে যে দেশটিকে ইহুদিবাদী শক্তি বলা হতো? সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রতি এ নিয়ে প্রবল জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ, আল-আরাবিয়া টিভিতে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকার – যা দিয়েছেন প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান আল-সৌদ, সাবেক সৌদি গোয়েন্দা প্রধান, এবং যিনি ওয়াশিংটনে দীর্ঘকাল সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করায় ফিলিস্তিনি নেতারা যেভাবে উপসাগরের আরব দেশগুলোর সমালোচনা করেন- তার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রিন্স বান্দার।

তিন পর্বে প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারে সৌদি প্রিন্স বলেন, যে কর্মকর্তারা তাদের লক্ষ্যের প্রতি সারা বিশ্বের সমর্থন পেতে চান- তাদের কাছ থেকে এত নিম্ন স্তরের এই বিতর্ক আমরা আশা করি না। প্রিন্স বান্দারের মতে, উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি নেতাদের এই বাড়াবাড়ি এবং নিন্দনীয় কথাবার্তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন যখন ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তখন ফিলিস্তিনি নেতারা একে ‘বেইমানি’ এবং ‘পিঠে ছুরি মারা’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, প্রিন্স বান্দার ওয়াশিংটনে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ছিলেন একটানা ২২ বছর। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের এতই ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে অনেকে তাকে ‘বান্দার বিন বুশ’ নামেও ডাকতেন।

আল-আরাবিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রিন্স বান্দার ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের ঐতিহাসিক ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বলেন, তারা ধরেই নিয়েছিল যে সৌদি আরব সব সময়ই আমাদের সমর্থন দিয়ে যাবে। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের দাবি অবশ্যই ন্যায়সংগত। কিন্তু তারা যে এত বছরেও একটা শান্তি চুক্তি করতে পারল না।

এর জন্য ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব উভয়কেই সমানভাবে দায় নিতে হবে। ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব এখন বিভক্ত। পশ্চিম তীরে শাসনকাজ চালাচ্ছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, অন্যদিকে গাজার ক্ষমতা দখল করে আছে ইসলামপন্থি আন্দোলন হামাস। প্রিন্স বান্দার এ দিকেই ইঙ্গিত করে বলেন, ফিলিস্তিনিদের নেতারা যখন নিজেদের মধ্যেই একমত হতে পারছেন না, তখন তারা একটা চুক্তিতে পৌঁছাবে কীভাবে?

সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বলছিলেন, সৌদি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেলে এ ধরণের বক্তব্য কখনোই প্রচার হতে পারে না – যদি বাদশা সালমান এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আগে থেকে এটা অনুমোদন না করেন। ঐতিহাসিকদের সন্দেহ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পর সৌদি আরব ‘নীরবে’তা অনুমোদন করেছে।

এর কিছুদিন পরই সৌদি প্রিন্স বান্দার এই সাক্ষাৎকারটি দিলেন। এতে মনে হতেই পারে যে সৌদি আরবের নেতৃত্ব ইসরায়েলের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনের পথে তাদের জনগণের চাইতেও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

আই.এ/

মন্তব্য করুন